ধর্ম

সময়ের গুরুত্ব

  প্রতিনিধি ১২ মার্চ ২০২২ , ৫:০৬:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ:

আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে অসংখ্য অগনিত নিয়ামত দান করেছেন যে গুলো গননা করে শেষ করা যাবে না। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গননা করতে যাও, গননা করে শেষ করতে পারবে না। ( ইব্রাহীমঃ ৩৪)

এই নেয়ামতের মধ্যে একটা বড় নেয়ামত হলো সময়। আল্লাহ পাক মানুষকে যে সময় দিয়েছেন এই সময় একটা বড় দামী নেয়ামত। সময় এতো বড় নেয়ামত যে এই সময়কে কাজে লাগিয়ে মানুষ জান্নাতী হয়ে যেতে পারে। এর বিপরীত এই সময়কে কাজে না লাগানোর কারনে মানুষ জাহান্নামীও হয়ে যেতে পারে। এই সময়কে মানুষ ঈমানের কাজেও লাগাতে পারে, এই সময়কে কুফরের কাজেও লাগাতে পারে, এই সময়কে মানুষ নেক আমলের কাজেও লাগাতে পারে। আবার এই সময়কে মানুষ গোনাহের কাজেও লাগাতে পারে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যত কথা বলে বান্দাদেরকে ধমক দিবেন এবং তিরস্কার করবেন তার মধ্যে একটা কথা এটাও থাকবে-

অর্থাৎ আমি কি তোমাদেরকে এতটুকু বয়স এবং এতটুকু সময় দেয়নি, যে সময়কে তোমরা উপদেশের কাজে এবং নেক আমলের কাজে লাগাতে পারতে? (ফাতিরঃ ৩৭)

এ আয়াতে বুঝানো হয়েছে সময়কে কাজে না লাগালে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিরস্কার আসবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরায়ে আছরে কসম খেয়ে বলেছেনঃ সময়ের কসম মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে তারা ব্যতীত, যারা নিজেরা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে। অন্যকেও ঈমানের কথা বলে এবং আমলের কথা বলে। এখানে মোট চারটা বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই চারটা কাজে যাদের সময় লাগবে, তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। নতুবা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এই কসম থেকেও বোঝা যায় সময়ের গুরুত্ব কতখানি। সময়ের মূল্য না দিলে তোমার জীবন ব্যার্থ হবে। কারন গোটা জীবন কিছু সময়ের সমষ্টি মাত্র। এক কবি বলেছেন তোমার জীবন তো কয়েকটা শ্বাস-প্রশ্বাসের নাম। এক একটা শ্বাস ছাড়ছো, জীবনের এক একটা মূহুর্ত কমে যাচ্ছে। এক একটা শ্বাস গ্রহন করছো তোমার জীবনের এক একটা মূহুর্ত কমে যাচ্ছে। এই কতকগুলো শ্বাস প্রশ্বাসের নামইতো জীবন। তাই জীবনকে অর্থবহ করতে হলে প্রত্যেকটা সময়কে কাজে লাগাতে হবে।

সাধারনতঃ আমাদের সময় নষ্ট হয় বিনা প্রয়োজনে কথা বলার কারনে, কিংবা বিনা প্রয়োজনে বেশি বেশি মেলামেশার কারনে। বেশি বেশি কথা বললে একদিকে সময় নষ্ট হয়, আবার বেশি কথা বললে বেশি ভুল হয় এবং বেশি গোনাহ হয়। তাই হাদিসে বলা হয়েছে, যার কথা বেশি হয় তার ভুল ভ্রান্তিও বেশি হয়। অতএব কথা কম বললে ভুল ভ্রান্তি ও মিথ্যা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। ( তিবরানি )

হযরত ওমর (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কথা না বলে চুপ থাকে সে নিরাপদ থাকে।

বেশি কথা বলার আরও অনেক ক্ষতি। বেশি কথা বললে গীবত-শেকায়েতও বেশি হয়, মিথ্যাও বেশি হয়, হাসি মস্করা, টিকা টিপ্পনী ও বেশি হয়, বাজে কথাও বেশি হয়। তাই সময়কে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে হলে কথা কমাতে হবে। নিঃপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকতে হবে।

অতএব সময় থাকতে এই সময়কে যত বেশি সম্ভব কাজে লাগানো চাই। আমরা সময়ের ব্যাপারে ধোকা খাই। মনে করি আজ নয় কাল করবো। এখন নয় আগামীতে করবো। এভাবে আগামীর চক্করে পড়ে এক সময় মৃত্যু এসে যায় সময়কে আর কাজে লাগানো হয় না। সময় এবং সুস্থতা উভয়ের ব্যাপারে আমরা এরকম ধোঁকা খাই। তাই নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন আল্লাহর বড় দুটো নেয়ামত রয়েছে, যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকা খায়। সে দুটো নেয়ামত সুস্থতা ও অবসর। ( বুখারী- ৬০৪৯)

আমরা অনেক সময় চিন্তা করি যে, আমল করা দরকার, আমল করতেই হবে, আমাকে তো মরতেই হবে, আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে। অতএব আমল করা ছাড়া কোন উপায় নেই, তবে এখন তো একটু অসুবিধার ভিতর আছি, এখন নানান ঝামেলায় আছি, আচ্ছা কয়েকদিন পরেই ভালমত আমল শুরু করা যাবে সামনে ঠিকমত সব আমল শুরু করে দিবো। এই বছরটা একটু ঝামেলায় আছি হজ্জ্ব করতে পারলাম না যাক আগামীতে করবো। সবসময় তো আর ঝামেলা থাকবে না। আমরা ভাবি এখন টাকা-পয়সা কম আছে, একটু দান-সদকা কম করলাম সামনে খুব দান-সদকা করবো। ইদানিং শরীর টা একটু খারাপ, কদিন পর সুস্থ হয়ে যাবো তখন ঠিক মতো আমল করবো। এই চক্কর থেকে কেউ কোনদিন উঠে আসতে পারবে না। এর মোকাবেলা করার উপায় হলো এখনই যথাসাধ্য আমল শুরু করে দেওয়া এবং এ কথা চিন্তা করা যে, সামনে ঝামেলা কমবে , সামনে অভাব কমবে, সামনে সুস্থতা বাড়বে এগুলোর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং বাস্তবে দেখা যায় যত দিন যায় ততোই ঝামেলা বাড়ে, যত দিন যায় ততোই টাকা-পয়সার প্রয়োজন বাড়ে। যত দিন যায় ততোই রোগ-ব্যাধি বাড়ে।

একটা হাদিসে রাসূল (সাঃ) তাই সুন্দর করে বলেছেন-

পাঁচটা জিনিস আসার পূর্বে পাঁচটা জিনিসকে কাজে লাগাও, পাঁচটা অবস্থা আসার পূর্বে পাঁচটা অবস্থার মূল্যয়ন কর।

এক নম্বরঃ তোমার যৌবনকে কাজে লাগাও বার্ধক্য আসার পূর্বে।
দুই নম্বরঃ অসুস্থতা আসার পূর্বে সুস্থতাকে কাজে লাগাও।
তিন নম্বরঃ তোমার স্বচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অভাব আসার পূর্বে।
চার নম্বরঃ তোমার অবসর সময়কে কাজে লাগাও ব্যাস্ততা আসার পূর্বে।
পাঁচ নম্বরঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেন-”জীবনকে কাজে লাগাও মৃত্যু আসার পূর্বে।”(মেশকাত-৫৯৮৭ )
এই হাদিসের ভিতর বুঝানো হয়েছে যে, আগামীতে করবো, সামনে করবো -এই চক্করে পরবে না। বরং এখনই কাজ শুরু করে দাও। সামনে নয় বরং যা করার এই মূহুর্তে শুরু করে দাও। উর্দুতে একটা প্রবাদ আছে- আজকের কাজ আগামীর জন্য ফেলে রেখনা।

যা হোক সময় মানুষের জীবনের একটা বড় নেয়ামত। অন্যান্য নেয়ামতের মত এই নেয়ামতেরও শোকর আদায় করা ওয়াজিব। এই নেয়ামতের শোকর আদায় হবে যদি আমরা সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাই। আমাদের জীবন গঠন হবে যদি আমরা সময়কে কাজে লাগাই। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।
আমিন।

খতীবঃ মেরাদিয়া কবরস্থান মাদরাসা মসজিদ, খিলগাঁও ঢাকা,

Powered by