প্রতিনিধি ১৭ জুলাই ২০২০ , ৪:২৩:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া) : বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের শাবরুল গ্রামে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে কয়েক হাজার মানুষ। তাদের অভিনব কায়দায় নির্মম চাঁদাবাজি আর নির্যাতনে ইতিমধ্যে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে হিন্দু পরিবার। পুলিশের উপরে আস্থাহীনতায় চাঁদা দেয়ার পরেও ব্যবসা গুটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন ব্যবসায়ীরা। জীবন হারানোর ভয়ে আতংকে আছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষ। আতঙ্ক স্থবির করে দিয়েছে ওই এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবন। এসব ঘটনায় জড়িত ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বিপুল আকন্দর ছেলে মো. আপেল মাহমুদ (৩০) কে গত বুধার দুপুরে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। তবে তার অন্তত ১৫জন সহযোগী প্রকাশ্যে রয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৪ এপ্রিল ওই এলাকার মাথাইল চাপড় পূর্বপাড়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয় ইউসুফ প্রামাণিকের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক (২৩)। সে ওই গ্রামের সাগর, মুনির এবং শাবরুল গ্রামের আপেল গ্রæপের সহযোগী ছিলো। এই ঘটনায় জড়িত উল্লেখ যোগ্য সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এই হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলে চাঁদাবাজি শুরু করে এই গ্রæপের সদস্যরা।
সম্প্রতি গ্রæপটি শাবরুল বাজারে ছিট কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের কাছ থেকে ২০হাজার টাকা চাঁদা নেয়। এই ব্যবসার সামান্য আয়ে সংসার চলে সালামের। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসী আপেল মাহমুদের হাতে টাকা দেয়ার পরেও বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন তিনি। এখন ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং আপেল গ্রেফতার হওয়ায় নিঃশ্বাস ভারি হয়ে গেছে সালামের। বর্তমানে তিনি চরম নিরাপতত্তাহীনতায় ভুগছেন। কোন অবস্থাতেই এখানে জীবন বাঁচানো সম্ভব নয় তাই ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সালাম।
ওই এলাকার আরেকজন শফিকুল ড্রাইভার। একই ভয় দেখিয়ে চাপ সৃষ্টি করে গ্রæপটি। আপেল মাহমুদের হাত দিয়ে তার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা চাঁদা নেয়। পুলিশকে জানানো পরের কথা। টাকা দিয়েও আতঙ্কে আছেন তিনি। একটা ঘটনা ঘটেছে সে ব্যপারে তিনি থানা বা অন্য কোথাও কোন অভিযোগ দেননি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে গ্রামে বসবাস করতে হবে। তাই এই ব্যপারে তিনি কিছু করতে বা বলতে চাননা বলে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন শফিকুল।
আপেল, মুনির এবং তার সহযোগীদের দ্বারা নির্যাতিত শাবরুল ছোট হিন্দু পাড়া গ্রামের পরিমলের ছেলে নাপিত সুমন। তিনি সাবরুল বাজারে একটি সেলুন দিয়ে জীবন চালাচ্ছিলেন। এই গ্রæপের চাহিদা মত ৩লক্ষ টাকা দিতে না পারায় সুমনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো এই সন্ত্রাসীরা। তখন গরু, স্বর্নালংকার এবং জমি ক্ষতি করে ৭০হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিলেন সুমনের পিতা পরিমল। সন্ত্রাসীরা সেই সময় আরো ১লক্ষ টাকা দাবি করেছিলো। না দিলে সুমনকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর সুমন তার স্ত্রী এবং ৪বছরের সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। সুমনকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন সুমনের বাবা-মা।
এর আগে ২০১৭সালের ৩ অক্টোবর শাবরুল উত্তরপাড়া গ্রামের ওয়ালেদা বেগম(৪৫) কে ছুরিকাঘাত করেছিলেন সন্ত্রাসী আপেল মাহমুদ। এই গ্রæপের অভ্যন্তরীন কোন্দলে খুন হয় ভ্যান চালক হত দরিদ্র মজনু মিয়া। বাড়ির অদূরে জঙ্গলের ভেতরে তার লাশ পাওয়া যায়। সেই মামলায় পুলিশ তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়। এই সন্ত্রাসীরা টার্গেট ব্যক্তির হাত কেটে নেয়াসহ আতঙ্ক, আধিপত্য ধরে রাখতে সব ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।
শাবরুল বাজার কমিটির একাংশের সভাপতি আনছার আলী জানান, সালাম, শফিকুল এবং সুমনের ঘটনা তিনি শুনেছেন। তবে এসব ব্যাপারে তিনি কথা বলতে পারবেন না। কথা বললে কখন কে কি করে বসে বলা যায়না।
শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (সার্বিক) আজিম উদ্দীন জানান, ঘটনাগুলো তারা শুনেছেন। আপেলকে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীদের নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ।