পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ থাকবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পরামর্শেই র্যাব গঠন করা হয়েছিল। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই দেশগুলো র্যাবের মতো বাহিনী সৃষ্টির ধারণা দেয়। তারাই তৎকালীন সরকারকে এর জন্য ‘সরঞ্জাম’ দেয়।
ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমি জানি না এটা। আমাদের একটা অনুরোধ থাকবে তাদের প্রতি, তাদের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের যে বিভাগ বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক দেখভাল করে, তার নেতৃত্বে আছেন ডোনাল্ড লু। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর তাঁর সরকারের পতনের চাপ সৃষ্টির জন্য ডোনাল্ড লুকে দোষারোপ করেছিলেন। গত বছর মার্চে অংশীদারি সংলাপে অংশ নিতে ঢাকা সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডোনাল্ড লু।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, ‘ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শ্রম ও মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে তাঁদের ভাবনা শোনা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদারে আলোচনা ওই বৈঠকগুলোর উদ্দেশ্য।’
এটি চলতি মাসে বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিনিধিদলের দ্বিতীয় সফর। চার দিনের সফর শেষে গত মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলেন লবাখ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলেটের বাংলাদেশ সফর নিয়েও আলোচনা চলছে। তাই ডেরেক শোলেটের সফরের প্রস্তুতি হিসেবে ভূমিকা রাখবে লুর সফর।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর থেকে প্রতিটি বৈঠকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে সরকার। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবারের বৈঠকেও এ বিষয়গুলো আসতে পারে। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের গুলিতে একজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার পর এর প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন করা হয়েছে। তাই এ বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন নিয়ে প্রকাশ্যে ও আড়ালে সরকারকে বার্তা দিয়ে আসছে। গত মাসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বেগ জানানোর পর বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে দূতাবাসকর্মীদের নিরাপত্তা এবং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্থিতিশীলতা দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছে। আজকের বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস) ও ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামোতেও (আইপিইএফ) বাংলাদেশকে চায়। নিরাপত্তাবিষয়ক দুটি চুক্তি নিয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছে। এ বিষয়গুলো আজকের বৈঠকে আসতে পারে।