ফিচার

যে কারণে শীতে নারকেল তেল জমে

  প্রতিনিধি ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ , ৮:১৩:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক :

ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশে চুলের যত্নে বহুল ব্যবহৃত উপাদান নারিকেল তেল। তবে শীতকালে ব্যবহার করতে একটু বাড়তি ঝক্কি পোহাতে হয় কারন জমে যাওয়া তেল গলিয়ে নিতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, নারিকেল তেল কেন শীতকালে জমে যায় আর অন্যান্য তেল যায় না কেন? এর উত্তর দিয়েছে বিবিসি বাংলা।

কারণ যখন চর্বি

তাপমাত্রার সঙ্গে তেল জমে যাওয়ার মূলত একটি বিষয়ের সম্পর্ক সেটি হচ্ছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। স্যাচুরেটেড ফ্যাট হচ্ছে এমন ফ্যাট বা চর্বি যার রাসায়নিক উপাদান স্বাভাবিক কক্ষ তাপমাত্রায় কঠিন বা জমাট আকারে থাকে।

সাধারণত প্রাণিজ খাবারে এই ফ্যাট বেশি থাকে। যেমন গরুর মাংস, দুধ বা পনির। তবে উদ্ভিজ্জ খাবারেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার উৎকৃষ্ট নমুনা নারিকেল তেল। নারিকেল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি বলে ২৪-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জমে যায়।

উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে আরো একটি তেল আছে যেটি এমন কাছাকাছি তাপমাত্রায় জমে যায়, সেটি হচ্ছে পাম তেল। এটিতেও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি।

এর বিপরীতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট কক্ষ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। বাংলাদেশে পরিচিত বিভিন্ন তেল, যেমন সরিষা, সয়াবিন, সূর্যমুখী বা জলপাই তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা কম, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি বলে সেসব তেল শীতকালে জমে যায় না। নারিকেল তেলেও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে কিন্তু কম মাত্রায়।

খাওয়া যায়?

নারিকেল তেল বাংলাদেশে তেমন খাওয়া না হলেও শ্রীলঙ্কায় বেশ প্রচলিত। বাংলাদেশে সাধারণত নারিকেল তেল চুলে বা ত্বকে ব্যবহারের জন্য বিক্রি হয় বেশি। তবে ভোজ্য নারিকেল তেলও পাওয়া যায়, বা চাইলে ভাঙিয়ে বা ঘরে বানিয়ে নেয়া যায়। বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য যে নারিকেল তেল বিক্রি হয় তাতে সুগন্ধি বা রাসায়নিক উপাদান যুক্ত করা হয়ে থাকতে পারে, তাই সেগুলো না খাওয়াই ভালো।

খাওয়ার জন্য আনস্যাচুরেটেড তেলকে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে এগিয়ে রাখা হয়, অর্থাৎ যেগুলো তরল অবস্থায় পাওয়া যায়।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন নানা বিতর্ক থাকলেও নারিকেল তেল বা পাম অয়েলের যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে সেটা উদ্ভিজ্জ হওয়ায় সেগুলো উপকারি হিসেবেই দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আকতারুজ্জামান।

স্যাচুরেটেড বা আনস্যাচুরেটেড, দুই ধরনের ফ্যাটেরই শরীরে প্রয়োজন আছে। তবে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও বেশি গ্রহণ করলে বা দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক পরিশ্রম না করলে তখন সেটা ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। যেমন তিনি উদাহরণ দেন প্রাণীজ উৎস থেকে আসা ঘি বা মাখনের, যাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে বলে জমাট বেধে থাকে, কিন্তু সেগুলো একটা মাত্রার মধ্যে খুবই স্বাস্থ্যকর।

তবে উদ্ভিজ্জ তেলের সাধারণ স্যাচুরেটেড বা আনস্যাচুরেটেড না, বরং ট্রান্স ফ্যাট বেশি সমস্যার। বিশেষভাবে হাইড্রোজেন যুক্ত করা হয় ট্রান্স ফ্যাটের ক্ষেত্রে। যেমন ডালডা, যেটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আবার ডুবো তেলে ভাজা, বা একই তেল বারবার ব্যবহার করলেও সেটা ট্রান্স ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। সেগুলো বর্জন করাই ভালো।

ভোজ্য তেলের মধ্যে ড. আকতারুজ্জামান এগিয়ে রাখেন দেশে উৎপন্ন তিসির তেল ও তিলের তেলকে, এরপর নারিকেল ও পাম তেল। তার মতে আমদানিকৃত তেলের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থাকা বা বাতাসের সংস্পর্শে অক্সিডেশন হয়ে গুনাগুণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by