নির্বাচিত

মাহামান্নীত লাইলতুল কদর

  প্রতিনিধি ১৯ মে ২০২০ , ৬:১৯:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ :  লায়লাতুল ক্বদর বছরের যে কয়েকটি অতিব সম্মানিত ও ইবাদতের রাত হিসেবে প্রসিদ্ধ রয়েছে, পবিত্র লায়লাতুল ক্বদর তন্মধ্যে অন্যতম। এই রাতের শান এবং আজমত বুঝানোর জন্য মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে একটি স্বতন্ত্র সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যার নাম “সূরাতুল ক্বদর”। * লায়লাতুল ক্বদর নামকরণ * মহান আল্লাহ পাক কোরআনে পাকে এরশাদ করেন ليلة القدر خير من ألف شهر অর্থাৎ ক্বদরের রাত্রি হাজার মাস থেকে উত্তম, সোবহানাল্লাহ। এই রাতকে কোরআনে পাকে লায়লাতুল ক্বদর বললেও আমাদের দেশে সাধারণত এরাতকে শবে ক্বদর বলে থাকে অধিকাংশ মানুষ।

লায়লাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর অর্থ সম্মানিত রাত্রি ও বরকতময় রাত্রি। এটাকে লায়লাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর এইজন্য বলা হয় যে, এরাত্রে সারা বৎসরের বিধি বিধান বাস্তবায়নের জন্য প্রকাশিত করা হয়।আর ফেরেশতাদেরকে সারা বৎসরের দৈনন্দিন কর্তব্য (খেদমত) সমূহের আদেশ দেওয়া হয়।একথাও বর্ণনায় এসেছে, এরাত্রের সম্মানের কারণে এটাকে শবে ক্বদর বলে।

কয়েকটি কারণে এরাতটিকে লায়লাতুল কদর বা সম্মানিত রাত বলা হয়। যথা (১)قدر অর্থ মর্যাদা, সম্মান। এরাত্রে পূণ্যবান ও এবাদতকারীগনের মর্যাদা ও সম্মান বিশেষভাবে প্রকাশ পায়। সর্বোপরি এ মহান রাতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে। (২)ক্বদর অর্থ মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব। এ রাতের ইবাদত বন্দেগীরও বিশেষ মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব রয়েছে। (৩)কিছু কিছু তাফসিরকারকগণ قدر শব্দকে تقدير এর অর্থে ব্যবহার করেছেন, তখন লায়লাতুল কদর এর অর্থ হবে লায়লাতুত তকদীর। বস্তুত পরবর্তী বৎসরের বাজেট নির্ণয় হয় এমহান রাত্রিতে।

*লায়লাতুল কদরের বৈশিষ্ট্যবলী: (১) এ রাতের প্রারম্ভ থেকে শেষ অবধি আল্লাহ পাকের তাযাল্লী বা রহমতের আলোকরশ্মী বান্দার প্রতি বিচ্ছুরিত হয়। (২)অসংখ্য ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়। (৩)রূহ বা আত্মাসমূহ জমীনে বিচরণ করে। (৪)কোরআন শরীফ লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বায়তুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয়। (৫)এরাতে ফেরেশতা সৃষ্টি করা হয়। (৬)হযরত জিব্রাঈল আঃ অবতীর্ণ হন (৭)সাগরের লবণাক্ত পানি মিষ্টি হয়ে যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি।

*হাদীস শরীফের আলোকে লায়লাতুল কদরের ফজিলত : বোখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, «مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘‘যে ব্যক্তি লায়লাতুল ক্বদরে ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে বিনিদ্র ইবাদাত করবে, তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ আল-বুখারী] এ রাত পাওয়াটা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়।

এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِهِ». ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ (সহীহ মুসলিম : ১১৭৫) *লাইলাতুল কদরের দোয়া :: হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, তিনি আরজ করলেন – ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি কি বলেন – যদি আমি লাইলাতুল কদর পাই যাই তবে কি বলে দোয়া করব?? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন বলবেঃ «اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى» ‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ (ইবনে মাজাহ শরীফ) ।

পবিএ লায়লাতুল ক্বদরের আমল সমূহ : (১)কোরআন নাযিলের এই রাতে বেশি বেশি কোরআন শরীফ তেলওয়াত করবেন। (২)নিম্নোক্ত নিয়মে কমপক্ষে ২ রাকাত নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইনশিরাহ (আলামত নাশরাহ লাকা) ১বার,সূরা ইখলাস ৩ বার, সালাম ফিরানোর পর ২৭ বার সূরা ক্বদর পাঠ করবে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য ছাওয়াব ও নেয়ামত পাওয়ার জন্য এনামাজ খুবই উত্তম। (৩)চার রাকাত নামাজ নিম্নোক্ত নিয়মে আদায় করলে আদায়কারী গুনাহ থেকে এমনভাবে পূতঃপবিত্র হবে, যেন নিস্পাপ শিশু সদ্য ভূমিষ্ট হয়েছে এবং উনাকে জান্নাতে হাজার কামরাহ দেওয়া হবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ক্বদর ১বার,সূরা ইখলাস ২৭ বার, (৪)হযরতে সৈয়্যিদুনা আলী রঃ ফরমান,যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে এশার নামাজের পর ৭ বার সূরা ক্বদর পাঠ করবে, উনি প্রত্যেক প্রকারের বিপদ থেকে মুক্তি পাবে,হাজার ফেরেশতা তার জান্নাত নসীব হওয়ার জন্য দোয়া করবে।

পরিশেষে আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ করি যেন, মহান রব্বুল আলামিন আমাদেরকে লায়লাতুল ক্বদর নসীব করেন এবং উক্ত রাত্রিতে জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগী করার তৌফিক দান করেন। আমিন

লেখক : মৌলনা মুহাম্মদ সরওয়ার আলম আলকাদেরী,

সুপার শান্তিরহাট আহমদীয়া দাখিল মাদরাসা ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by