সম্পাদকীয়

বৈদেশিক নীতিতে এরদোয়ান এবং তুরস্কের অবস্থান

  প্রতিনিধি ২৩ মে ২০২২ , ৪:৩৯:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রায়হান আহমেদ তপাদার:

ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই তুরস্কের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর। তুরস্ক তার প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪৫ শতাংশ পায় রাশিয়া থেকে। এই রাশিয়া থেকেই দেশটি তার মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ গম আমদানি করে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের পর্যটকদের কাছে গরমের ছুটি কাটানোর শীর্ষস্থানীয় পছন্দের জায়গা হলো তুরস্ক। এই দুই দেশ থেকে বছরে ৫০ লাখ পর্যটক গরমের ছুটি কাটাতে তুরস্ক যায়। ফলে দুটি দেশই এরদোয়ানের কাছে অতিগুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে তাঁকে সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। তুরস্ক আগে থেকেই সামরিক চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের কাছে ড্রোন বিক্রি করে আসছে, যা মস্কো প্রথম থেকে ভালোভাবে নেয়নি। তুরস্কের ড্রোন অসংখ্য যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এই ড্রোন বর্তমান যুদ্ধে ইউক্রেন ব্যবহারও করছে। গত বুধবার কিয়েভ ঘোষণা করেছে, তারা মাত্রই এই ড্রোনের একটি নতুন চালান হাতে পেয়েছে। তুরস্ক ইউক্রেনে এগুলো রপ্তানি অব্যাহত রাখলে তা রাশিয়াকে আরও রাগিয়ে দেবে।ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কোন পক্ষ নেবে, তা নিয়ে তুরস্ক দোটানায় পড়ে গেছে। কারণ, দুটি দেশের সঙ্গেই তুরস্ক ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিকভাবে জড়িয়ে আছে। আঙ্কারা যেকোনো উদ্যোগ এক পক্ষকে খুশি এবং আরেক পক্ষকে ক্ষুব্ধ করবে। এ কারণে একটি জটিল কূটনীতির মধ্য দিয়ে তাকে এগোতে হচ্ছে। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জন্য দুই দিক মানিয়ে চলা কঠিন হচ্ছে। ন্যাটো যদিও সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা দেখাবে না বলে ঘোষণা করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটাচ্ছে।তুরস্ককে দলে ভেড়াতে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ন্যাটো-এই তিন পক্ষই চাপ দিচ্ছে। এর মধ্যে ন্যাটোর চাপকেই গুরুতর মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই এরদোয়ান নিজেকে কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসেবে পরিচিত করায় ন্যাটোর দিক থেকে তাঁর ওপর চাপ আছে।

তার ওপর সম্প্রতি তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে বিমান-বিধ্বংসী এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। এটি সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।এরদোয়ান বলছেন, তিনি ন্যাটো কিংবা রাশিয়া-কাউকে ঘাঁটাতে চান না। তিনি ইউরোপিয়ান কাউন্সিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে পুতিনকে রাগাতে চাননি। কিন্তু পরে পশ্চিমাদের সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার হামলার নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেন। তুরস্ক ইতিমধ্যে বলেছে, তারা পশ্চিমাদের অনুসরণ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবে না। এর দুটি কারণ আছে।এমন অনেক খাত আছে, যেখানে নিজেদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে তুরস্ককে রাশিয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। সে রকমই একটি ক্ষেত্র হলো সিরিয়া। সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে একচেটিয়া সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন পুতিন। পশ্চিমাদের সামরিক অভিযানের মুখে বাশারের এত দিন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কথা ছিল। মূলত রাশিয়া সমর্থন দেওয়ার সুবাদেই বাশার এখনো টিকে আছেন। কিন্তু বাশারবিরোধী যোদ্ধাদের সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক। তুরস্ক মনে করে, তার ভূখণ্ডে তৎপর কুর্দিদের সঙ্গে সিরিয়ার কুর্দিদের নিবিড় যোগাযোগ আছে এবং সিরিয়ায় কুর্দিরা শক্তিশালী হয়ে উঠলে তুরস্কের জন্য তা হুমকি হয়ে দেখা দেবে। এ বিবেচনায় তারা উত্তর সিরিয়ায় কুর্দিদের উত্থান ঠেকিয়ে রাখছে। এ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের টানাপোড়েন আছে।তাছাড়া ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে তুরস্ক এক অর্থে পশ্চিমের সঙ্গেই যোগ দিয়েছে। কিন্তু তারপরও তুরস্ক তার দুই মিত্র মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যকার একটি সূক্ষ্ম লাইন ধরে হাঁটছে।যদিও গত মাসে ইস্তাম্বুলে আয়োজিত বৈঠকে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিরা শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন, তথাপি তুর্কি নীতিনির্ধারকেরা বারবার জোর দিয়ে বলে যাচ্ছেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে তাঁরা সংলাপের সুযোগ বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন।

তবে তুর্কি রাজনীতিকদের মধ্যে একটি ব্লক রয়েছে যেটি যুদ্ধের ব্যাপারে একেবারেই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এই ব্লকটি তুরস্কের ইউরেশিয়ানবাদীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে। এই ব্লকটি মনে করে ইউক্রেনের ক্ষতি মানে তাদের লাভ।’ইউরেশিয়ানিজম’ একটি বিশদ অর্থবাহী শব্দ। ইসলামপন্থী থেকে শুরু করে কামাল পাশার ইহজাগতিকতাবাদে বিশ্বাসী ‘উলুসালসিস’ নামে পরিচিত উগ্র বামপন্থী জাতীয়তাবাদীরা (যাঁদের একটা বড় অংশ অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা) পর্যন্ত ইউরেশিয়াবাদে বিশ্বাসী। এই ‘ইউরেশিয়ানিস্ট’দের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁরা পশ্চিমকে অবিশ্বাস করেন। নিখিল তুর্কি ইতিহাসের গৌরবময় সময়কে ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে তাঁরা বিভোর থাকেন। রাশিয়া, ইরান, চীন এবং মধ্য এশিয়ার সাবেক তুর্কি দেশগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা আলাদা একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় তুরস্ক নেতৃত্ব দেবে এমনটাই তাঁরা আকাঙ্ক্ষা করেন।২০১৫ সালের নির্বাচনের পর থেকে, অর্থাৎ কিনা যখন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) তাদের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তখন থেকে রাজনীতিতে ন্যাশনালিস্ট অ্যাকশন পার্টির (এমএইচপি) অতি-জাতীয়তাবাদীদের এবং ইউরেশিয়ানিস্ট শিবিরের কিছু লোকের ভূমিকা বেড়েছে।জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স-এর জন্য বিশ্লেষক সুয়াট কিনিক্লিওগ্লু একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ‘ইউরেশিয়ানিজম ইন টার্কি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে সুয়াট কিনিক্লিওগ্লু উল্লেখ করেছেন, একজন ইউরেশীয় ভোটারকে শ্রেণিবদ্ধ করা সহজ নয়। এর কারণ ‘সব উলুসালসি ইউরেশিয়ানবাদী নয় এবং সব উলুসালসি একই রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। কিন্তু তাদের প্রভাব সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। সুয়াট কিনিক্লিওগ্লু লিখেছেন: ‘স্বল্প সংখ্যা এবং দুর্বল নির্বাচনী ক্ষমতা প্রদর্শন সত্ত্বেও তাঁদের নিরাপত্তা আমলাতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং তুরস্ক কৌশলগত কী পদক্ষেপ নেবে না নেবে সে বিষয়ক বিতর্কে তারা সোচ্চার থাকে।

এদিকে তুরস্কের হোমল্যান্ড পার্টির চেয়ারম্যান ডগু পেরিনসেকের ক্ষেত্রে সেই বিতর্কটি অনেকটা এইরকম: রুশ ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমানা পার হতেই পেরিনসেক মন্তব্য করেছিলেন, ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ তুরস্কের জন্য একটি হুমকি তৈরি করেছে; তিনি এই আক্রমণকে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম একটি রুশ হাতিয়ার’ বলে উল্লেখ করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘আটলান্টিসিস্ট’রা যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা প্রতিরোধ করতে তিনি তুর্কি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।অল্প কিছুদিন আগে হলে এই ধরনের আহ্বান ক্ষমতাসীন একেপির মনযোগ কাড়তে পারত। কারণ এরদোয়ানের একেপি ইউরেশিয়ানবাদীদের ওপর নির্ভর করে থাকে। কিন্তু এখন রাজনৈতিক স্রোতের কারণে তাদের বধির হওয়ার ভান করতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঙ্কারার বৈদেশিক-নীতি তৈরির একটি স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে
‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’। অর্থাৎ যাকে বলা যায়, অন্যদের ভয়ভীতি বা প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের মতো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা।এই ধারণাটি তুরস্ককে তাঁর বৈদেশিক নীতিতে প্রতিফলিত করতে এতটাই তাড়িত করেছে যে, দেশটি যখন সিরিয়া, লিবিয়া এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অনমনীয় ও একতরফাভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার পর প্রতিবেশীদের দ্বারা বিচ্ছিন্নতার হুমকিতে পড়েছিল, তখন ক্ষমতাসীন দলের অভিজাতরা সেই সম্ভাব্য বিচ্ছিন্নতাকে ‘উৎকৃষ্ট একাকিত্ব’ বলে প্রশংসা করতে শুরু করেছিলেন। তবে গত কয়েক বছরে তুরস্ক প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বাসনের জন্য বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার নজিরবিহীন উচ্চ মূল্যস্ফীতি (সরকারি হিসেবে ৬০ শতাংশ), ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের মুখে পড়েছে। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কিছু লাভ করা গেলে তা দেশের রাজনীতিতে কিছু চাপ কমিয়ে দেয় এবং ক্ষমতাসীন দল কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা ধার পায়।

অপরদিকে আঙ্কারার নতুন প্লেবুকটি ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েল এবং মিসরের মতো আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে বলে মনে হচ্ছে।একদিকে অপেক্ষাকৃত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের মিশ্রণ তুরস্ককে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে দিয়েছে; অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক হেভি হিটারদের ভূমিকা ক্ষয়িষ্ণুতার দিকে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা তুরস্ককে নতুন একটি প্রভাববিস্তারী অবস্থানে নিয়ে গেছে। পশ্চিমকে চ্যালেঞ্জ করার মতো রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি বিকল্প আঞ্চলিক ব্যবস্থার যে ইউরেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা আন্তর্জাতিক নিন্দা কিছুটা ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে হয়।

এ ক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এরদোয়ান ঘরে-বাইরে নিজের প্রভাব সংহত করতে চাচ্ছেন। কিন্ত তুরস্কের জন্য ভৌগোলিক অবস্থান আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৩৬ সালের মনট্রিয়াক্স কনভেনশন অনুযায়ী, কৃষ্ণসাগরের বসফরাস ও দারদানেল প্রণালির ভোগদখলে আছে তুরস্ক। কৃষ্ণসাগর কেন্দ্রিক শক্তি রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ের কাছেই এই দুটি প্রণালি সাংঘাতিক গুরুত্ব বহন করে। তুরস্ক আজ অবধি কনভেনশনটি যথাযথভাবে অনুসরণ করছে। এ কারণেই দেশটি ইউক্রেন ও রাশিয়ার দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। তবে এরপরও তুরস্কের কিছু পদক্ষেপ রাশিয়ার বিপক্ষে যাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তুরস্ককে কনভেনশনটির ‘যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ কার্যকর করতে বলেছে, যাতে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ বসফরাস এবং দারদানেল প্রণালি ব্যবহার করতে না পারে। তুরস্ক গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার অনুপ্রবেশকে একটি যুদ্ধ বলে অভিহিত করে এবং রুশ জাহাজের জন্য প্রণালি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বর্তমানে তুরস্ক দুটি প্রণালিই ন্যাটোভুক্ত দেশসহ সব দেশের যুদ্ধজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এরদোয়ান বলছেন, তিনি ন্যাটো কিংবা রাশিয়া কাউকে ঘাঁটাতে চান না। তিনি ইউরোপিয়ান কাউন্সিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে পুতিনকে রাগাতে চাননি। কিন্তু পরে পশ্চিমাদের সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার হামলার নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেন। তুরস্ক ইতিমধ্যে বলেছে, তারা পশ্চিমাদের অনুসরণ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবে না। এর দুটি কারণ আছে। প্রথম কারণটি রাজনৈতিক। বছরের পর বছর এরদোয়ান এবং তুরস্কের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম পশ্চিমাদের সমালোচনা করে এসেছে। এখন যদি তাদের সুরে এরদোয়ান সুর মেলান, তাহলে দেশবাসীর কাছে তা ভালো লাগবে না। এটি এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা নষ্ট করবে। দ্বিতীয় কারণটি হলো অর্থনৈতিক। তুরস্কের ওপর নানা ধরনের অবরোধ থাকায় এমনিতেই দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে গেছে, মুদ্রার মান পড়ে গেছে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। রাশিয়ার গম, জ্বালানি ও পর্যটকের ওপর তুরস্ক অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়া তার পক্ষে কঠিন।তবে যুদ্ধ যদি দীর্ঘ মেয়াদে চলতে থাকে, তাহলে এরদোয়ানের পক্ষে বেশি দিন নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব হবে না। তাঁকে হয়তো ন্যাটোর দিকে, তথা ইউক্রেনের দিকেই ঝুঁকতে হবে। ইউক্রেনের যুদ্ধ এরদোয়ানকে অবশেষে কাভালাকে আজীবন কারাগারে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এই অঞ্চলে তুরস্ক কেন্দ্রীয় জায়গায় আছে এবং যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে বিপর্যস্ত ইউক্রেনীয়দের কাছে আঙ্কারা ড্রোন বিক্রি করেছে-এই দুটি বিষয় তুরস্ককে পশ্চিমের কাছে একটি অপরিহার্য অংশীদার করে তুলেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই তুরস্কের বাণিজ্য-সম্পর্ক ভালো। এটি এরদোয়ানকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতাকারী হতে সহায়তা করেছে।

এদিকে যুদ্ধের কুয়াশা যত ঘনীভূত হচ্ছে, কাউন্সিল অব ইউরোপ কমিটি অব মিনিস্টারস তুরস্কের ওপর যথাযথ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কি না, তা নিয়ে তত সংশয় দেখা দিচ্ছে। সম্ভবত তুরস্কের পশ্চিমা মিত্ররা এরদোয়ানকে দায়মুক্তি দেওয়ার অজুহাত খুঁজে পাবে এবং ৬০-এর কোঠায় থাকা কাভালা নামের একজন অধিকারকর্মী বিস্মৃতির অতল গহ্বরে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by