চট্টগ্রাম

বিজয়নগরের লিচু বাজারে দু’ঘন্টায় বিক্রি হয় কোটি টাকার লিচু

  প্রতিনিধি ২৬ মে ২০২১ , ৮:২২:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া লিচুর জন্য সুপরিচিত নাম বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয়। এচারা সিঙ্গারবিল, পত্তন, চম্পকনগর ও হরষপুর ইউনিয়নে কম বেশী জায়গায় লিচুর বাগান আছে।

এবছর প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষাবাদ হয়েছে, যার বেশি অংশ পাহাড়পুর ইউনিয়নে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আকর্ষণীয় বাহারি রঙের লিচু বিক্রি হলেও বিজয়নগরের লিচুর কদর আলাদা। বিজয়নগরের লিচু মানেই অন্যরকম মিষ্টি ও রসালো। বিজয়নগর এর লিচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। বিজয়নগর থেকে লিচু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সহ হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ঢাকা শহরে প্রতিদিন যাচ্ছে। পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজারে বিজয়নগর এর লিচুর জন্য অস্থায়ীভাবে প্রসিদ্ধ হাট বসে। ভোররাত থেকে শুরু হয়ে সকাল আটটা পর্যন্ত পাইকারি ও খুচরা লিচু বেচা কেনা হয়। লিচু বেচাকেনা হলেও গণপরিবহন না চলায় আসতে পারছে না দূর দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। সরকারী বিধিনিষেধ মেনে গণপরিবহন চালু হওয়ায় লিচু চাষী ও বাগানীদের মুখে হাসি।

 

এবছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টির প্রভাবে লিচুর ফলন কম হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে লিচুর বাহারি রঙ আসার আগেই পুরোধমে বিক্রি করতে হচ্ছে। লিচু ফেটে যাওয়া, লিচুতে কাল দাগ হওয়ার ভয়ে নভেল করোনাভাইরাস এর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ পরিস্থিতি চলমান বিধিনিষেধের কারণ বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় লিচু চাষী ও বাগানিরা। প্রচণ্ড তাপদাহে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে লিচু বাগান মালিক ও আগাম বাগান ক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা। এমতাবস্থায় লক্ষমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ। বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে দেশী, বোম্বাই, চায়না থ্রি লিচু এখন এক এক করে বাজারে আসছে। বৃষ্টির অভাব, প্রখর রোদে লিচুর রঙ কিছুটা জ্বলে গেলেও নির্ধারিত সময়ের আগে বাজারে এসেছে। পরিপূর্ণ পুষ্টিকর, সুস্বাদু না হলেও বাজারে লিচুর কদরের কমতি নেই।

বাগান মালিকরা জানান, এবছর সময়মত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ফলন কম। ভালো ফলনের আশায় গাছে সেচ এবং ফলন বেশী হওয়ার জন্য গাছে ভিটামিন স্প্রে করেছে বাগান মালিক ও কৃষকরা। এতে অন্য বছরের চেয়ে বাগানের যত্নে ব্যয় হয়েছে অতিরিক্ত। বিজয়নগরের আউলিয়া বাজারে সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন কালে লিচু ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ১০০ লিচুর পাইকারি মূল্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। লিচুর প্রকার বেধে মূল্য পরিবর্তন হচ্ছে। কয়েক জন পাইকারি লিচু ক্রেতা জানালেন, অধিক মুনাফার আশায় বাগানে লিচু কিনেছে, স্থানীয় বাজারে ভাল দর পেলে বিক্রি করছে, দর মনমত না হলে ছোট ছোট গাড়ীতে করে নিজেদের বাজারে বিক্রির জন্য প্রেরণ করছে। যাতায়াত খরচ বেশী হওয়ার কারণে লিচুর মূল্য বৃদ্ধি না করে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিজয়নগরের লিচু পল্লিখ্যাত পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজা মুড়া। লিচুর চাষাবাদ বেশী হওয়ায় মোড়ের নাম হয়েছে “লিচু বাগানের মোড়”।

এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এ থেকে উৎপাদন আসবে প্রায় এক হাজার টন লিচু। এ অঞ্চলের লিচুর মধ্যে দেশি, পাবনাই, বোম্বাই , চায়না টু ও চায়না থ্রি, লিচু উল্লেখযোগ্য। আউলিয়াবাজার ছাড়াও সারাদিন লিচু পাওয়া যায়, চম্পকনগর বাজার ও সিঙ্গারবিল বাজারে। ভাল মানের লিচু এসব বাজারে পাইকারি ও খুচরা দিনের শেষে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। বিজয়নগরে “লিচু বাজার” খ্যাত আউলিয়া বাজারে ভোর ৩ টা থেকে লিচু আসা শুরু হয়ে সকাল ১০ টা পর্যন্ত থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা রসালো ফল লিচু কেনার জন্য নিজেরা পরিবহন নিয়ে আসে। পিকআপ সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় করে লিচু পরিবহন হয়। “লিচু বাজার” এর লিচু বিক্রেতা থেকে পাইকাররা সরাসরি কিনতে পারে। পাইকারি বেচাকেনা হয় সকাল ৫ থেকে ৭ টা পর্যন্ত। মাত্র দু’ঘন্টায় কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয় লিচু বাজারে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খিজির প্রামাণিক এর সাথে মুঠোফোনে লিচু বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয় এবিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিদিন ভোরে আউলিয়া বাজারে গেলে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বাগানিরা লিচু নিয়ে বসে। লিচু বাজারে প্রতিদিন গড়ে কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হয়।

 

তিনি আরো বলেন, লিচু বাগানে বাগান মালিকদের লোকসান হয়না। লভ্যাংশ কম বেশি হতে পারে। অনেক কৃষক নতুন করে লিচু বাগান করার আগ্রহী, নতুন যারা বাগান করতে চায় তাদের উচিৎ, একটি বাগানে সব জাতের গাছ লাগানো উচিত। এতে করে এক জাতের কম আসলে অন্য জাতের লিচু বেশি আসবে, এতে করে পুষিয়ে যাবে ।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by