কৃষি

পাহাড়ে মুখীকচু চাষে কৃষকের মুখে হাসি

  প্রতিনিধি ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ২:২৩:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ ইব্রাহিম শেখ (পার্বত্য চট্রগ্রাম ব্যুরো):

সবুজ পাহাড়ে মুখীকচুর বাম্পার ফলনে আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে প্রান্তিক কৃষকরা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পাহাড়ের বুক চিড়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে পাহাড়ের সাদা সোনা খ্যাত মুখীকচু। বিস্তীর্ণ উঁচু-নিচু পাহাড় জুড়ে সবুজ কচু গাছে শুধুই সাদা সোনার হাতছানি।

খাগড়াছড়ির সব উপজেলায় মুখীকচুর চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি চাষ হয় মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা ও রামগড়ের ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে। সরেজমিনে ঘুরে উঁচু-নিচু পাহাড় জুড়ে দেখা মিলে কচু গাছের। সবুজ কচু গাছেই যেন সফলতার মুখ দেখছেন স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকরা।

স্থানীয় চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধান ও অন্যান্য সবজির পাশাপাশি খাগড়াছড়ির কৃষকরা পাহাড়ের ঢালুতে মুখীকচুর চাষ করছেন। মুখীকচু চাষে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে পাহাড়ের কৃষক পরিবারে। মুখীকচু চাষে গত কয়েক বছরে বদলে গেছে এলাকার অর্থনীতি। এ সবজি লাভজনক হওয়ায় চাষের পরিধি বাড়ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, মুখীকচু বাংলাদেশে গুঁড়াকচু, ছড়াকচু, দুলিকচু, বিন্নিকচু নামেও পরিচিত। পোকা ও রোগবালাই তেমন না থাকায় খরচ কম সে কারণেই স্থানীয় কৃষকরা মুখীকচুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কচুগোত্রীয় সবজির মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় মুখীকচু। মুখীকচুর ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মুখীকচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চৈত্র মাসের শুরুতেই পাহাড়ের আগাছা পরিষ্কার করে মাটি কুপিয়ে চাষযোগ্য করে তোলা হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রথম বৃষ্টি হলেই মাটিতে মুখীকচুর বীজ বপন করা হয়। চারা গজানোর পরে আগাছা পরিষ্কার, কেইল বা লাইন করা (দুপাশ থেকে মাটি গাছের গোড়াতে দেওয়া) ও প্রয়োজন মতো কয়েকবার সার প্রয়োগ করতে হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে মুখীকচু জমি থেকে উত্তোলন ও বিক্রি শুরু হয়।

ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘লৌহ’ গুণসম্পন্ন মুখীকচু পাহাড়ের চাহিদা মিটিয়ে জায়গা করে নিয়েছে নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ সমতলের বড় বড় পাইকারি হাটে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা দুর্গম তবলছড়ির কৃষক মো. আবুল হোসেন জানান, উচুঁ-নিচু পাহাড়ের ঢালু ছাড়াও সমতলে মুখীকচু চাষ করা হয়। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন মুখীকচু চাষের পরিধি বাড়ছে পাহাড়ের পর পাহাড়ে। রামগড়ের কচু চাষি মো. আব্দুল করিম বলেন, উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কচু চাষে লাভের মুখ দেখছেন স্থানীয় চাষিরা।

মুখীকচুর পাইকারি ব্যবসায়ী মো. নুরুল ইসলাম ও গিয়াসুদ্দিন জানান, গত কয়েক বছরে মুখীকচু পাহাড়ের চাহিদা মিটিয়ে জায়গা করে নিয়েছে নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বড় বড় পাইকারি বাজারে। মানিকছড়ির হাতিমুরা, গচ্ছাবিল, রামগড়ের নাকাপা, মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি ও তাইন্দংয়ে রয়েছে মুখীকচুর আড়ত। এখানে দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন তারা।

পাহাড়ের আবহাওয়া ও উর্বর মাটির ফলে মুখীকচুর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে মন্তব্য করে খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মর্তুজ আলী বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন খরচের দ্বিগুণ লাভ হয় বলে পাহাড়ের কৃষকরা মুখীকচু চাষে আগ্রহী হচ্ছে। পাহাড়ে দিন দিন বাড়ছে কৃষকদের সফলতার হাড়। পরিত্যক্ত পাহাড়ের ঢালুতে মুখীকচু চাষে সোনা ফলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। চলতি বছর খাগড়াছড়িতে ৮৭০ হেক্টর জমিতে মুখীকচুর চাষ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি

Powered by