উপ-সম্পাদকীয়

পাহারা প্রয়োজন, সচিবালয় থেকে গ্রাম 

  প্রতিনিধি ১১ মে ২০২০ , ৬:২২:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

এ কে আজাদ : দেশে যখনই কোনো দুর্যোগ, মহামারি নেমে আসে, সুযোগসন্ধানীরা বরাবরই সে সুযোগটা কাজে লাগায়। তারা তাদের নোংরা মানসিকতা ফুটিয়ে তোলে। করোনা আক্রান্ত বিশ্ব এখন মহামারিগ্রস্ত। এ মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। 

পৃথিবীর এ ক্লান্তি লগ্নে রাষ্ট্রনায়কগন,বিজ্ঞানী, গবেষক এবং ডাক্তার কেউ বসে নেই। নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। কোডিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব এখন ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার সীমানাজুড়ে এখন করোনা আতঙ্ক। দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ মহামারিকে প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো ভ্যাকসিন কিংবা ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। গবেষণা চলছে। আবিষ্কৃত হবেও হয়তো একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। আরও সময়ের দরকার হবে। হয়তো মাস বা বছর বা তার চেয়ে বেশি। কিন্তু মৃত্যু দূত অপেক্ষা করে না কারও জন্য। যার দরজায় আসে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। 

বাংলাদেশ এখন করোনাজ্বরে কাঁপছে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে মানুষ? কোথায় পাবে বেঁচে থাকার ঠিকানা? চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। বাড়ছে নিত্য হাহাকার। বাড়ছে দুর্নীতি। সচিবালয় থেকে গ্রাম পর্যন্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তিনি অভয় বাণী শুনিয়েছেন, কোনো মানুষের না খেয়ে থাকতে হবে না। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজে ভিক্ষুক থেকে শিল্পপতি সবাই আছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, কেউ যেন সাহায্য থেকে বঞ্চিত না হয়। একবিন্দু অনিয়ম সহ্য করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ একটা মাইলফলক। সারাদেশবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে।
কিন্তু সংশয় আর হতাশা। পারবেন কি প্রধানমন্ত্রী তার দৃঢ়তায় অবিচল থাকতে? তার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে? কারণ তার চারদিকে এখন যেমন বেকার দরিদ্র আর না খেয়ে থাকা মানুষের মিছিল, তেমনি আবার রয়েছে প্রকাশ্য ও ছায়া চোরের মিছিল। 

চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। চোরের মন বোকচার দিকে, সে যতো উঁচু মাপের লোক বা কর্মকর্তা হোক। তাই প্রশ্ন হলো, প্রণোদনার অর্থ ত্রাণ যথাযথ ব্যবহার হবে কি?
ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রচার মিডিয়ায় ত্রাণ চুরি ও অনিয়মের ফিরিস্তি উঠে এসেছে। সচিবালয় থেকে রাজনৈতিক নেতা ও মাঠ পযার্য়ের প্রশাসন পর্যন্ত এ কাতারে জড়িত রয়েছে। যখনি দেশে দুর্যোগ, প্লাবন, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস ও মহামারি এসেছে, এ জাতীয় কুকুরগুলো হা করে রয়েছে। সুযোগ বুঝে ছোবল দিয়েছে। সাবাড় করে দিয়েছে সব। অসাধু ব্যবসায়ী, কিছু চতুর রাজনৈতিক নেতা ও সুযোগসন্ধানী ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে। দেশের মধ্যে তৈরি করেছে কৃত্রিম সংকট। 

দৃশ্যত গ্রাম পর্যন্ত প্রণোদনা ও ত্রাণ সহায়তার প্রভাব চোখে পড়ে না বললেই চলে। শুধু শোনা যায় তালিকা প্রস্তুত চলছে। তাও গোপনে। এটাই বড় সুযোগ। গোপন যদি গোপনই থেকে যায় তাহলে ত্রাণ বিতরণ হবে শুভংকরের ফাঁকি। বিশেষ করে মাঠ পযার্য়ের প্রশাসনে এ দুর্নীতিটা বেশি চলবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আরও সজাগ থাকতে সবিনয়ে অনুরোধ করছি। তাকে জাতির জনকের অমর বাণীটি মনে করতে হবে, ‘সাড়ে সাত কোটি কম্বল, আমার কম্বলটি কোথায়’? 

ত্রাণ এখনো ২% মানুষের ঘরে পৌঁছেনি। অথচ সবার জন্য রয়েছে এ বরাদ্দ। প্রশাসনকে, রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্ন করলে বলে তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ তালিকা শেষ হবে কবে? শেষ পর্যন্ত এমন একটা চিরন্তন প্রবাদ যোগ করতে না হয়, ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগীটি মারা গেল’।

ত্রাণ বিতরণ বাস্তবায়ন করতে হলে চৌকস সেনাবাহিনীকে শতভাগ দায়িত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে টিম ওয়ার্ক করে কাজ করতে হবে। 
প্রশাসন ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও অনিয়মের স্বাক্ষর রেখেছে। উপজেলা প্রশাসন দুর্নীতিসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। যারা দেশের এ দুর্দিনে গরিবের অন্ন চুরি করছে তারা ভন্ড, মেধাশূন্য, বিবেকহীন পশু। তারা শিক্ষিত যাযাবর।

মহামারি বাংলাদেশে বারবার এসেছে। সরকার ও বিভিন্ন পেশার মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। বিধ্বস্ত জাতিকে আবার পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই অসাধু লোকেরা দুর্নীতি করেছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা অনেকে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছে তারাই যারা হতদরিদ্র, অসহায়, পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী।

আমাদের দেশে করোনার প্রভাব বেড়েই চলেছে। ত্রাণ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে রাখতে হতে পারে। তাই ত্রাণ বিতরণে প্রয়োজন শতভাগ স্বচ্ছতা। না হলে প্রণোদনা প্যাকেজ সমূলে বৃথা যাবে। আমি অনুরোধ করছি দায়িত্বশীল সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব বাহিনীর সদস্যদের। দেশের এ মহামারি উত্তরণে আপনারা শতভাগ দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করুন। ইতোমধ্যে আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গ্রামের মানুষ অসহায়। তারা দিশেহারা। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা ত্রাণ বিতরণ বাস্তবায়নে জনগণের পাশেই থাকুন । উপজেলা প্রশাসন মসজিদের মাইক থেকে শুধু লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। যা কেবল সদরে সীমাবদ্ধ।
প্রণোদনা প্যাকেজ ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে ভয়ংকর ব্যর্থতার গন্ধ পাচ্ছি। সাহায্য না পাওয়া মানুষেরা বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো লকডাউন অমান্য করে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছে। তাইতো করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ মহামারি অব্যাহত থাকলে আরও অনেককেই অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে। 

প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষিত ৭২৭৫০ কোটি টাকা। এ টাকা সর্বসাধারণের। দেশের স্বার্থে এটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। মনে রাখতে হবে আজ যারা হতদরিদ্র অথচ ঘরবন্দি বেকার, তারা আপনার আমার, আমাদের সবার নিরাপত্তার জন্য কষ্ট করছেন। দেশের স্বার্থে নিজেকে, নিজের পরিবারকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। তাই যারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক, মানবহিতৈষী কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং অতিশয় দায়িত্বশীল তারা এগিয়ে আসুন। তৃণমূল পর্যায়ে খোঁজখবর নিন। মনে রাখতে হবে দেশ আপনার-আমার প্রাণের গভীরে লালিত ত্যাগের স্বর্গীয় ভূমি। তাকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। 
তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। পাহারা বসাতে হবে, সচিবালয় থেকে গ্রাম পর্যন্ত। দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তির ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। তবেই আমরা ইনশাআল্লাহ এ দুর্যোগের হাত থেকে মুক্তি পাবো।
লেখক : কথা সাহিত্যক
 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by