রংপুর

উলিপুরে পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান
বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা

  প্রতিনিধি ১৮ মার্চ ২০২৩ , ৮:৪৬:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ


উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ এরই আলোকে প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উপকরণ সহায়তা দিয়ে পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কুড়িগ্রামের উলিপুরে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে পুষ্টি সবজিতে ভরে গেছে। উক্ত পুষ্টি বাগানে বিভিন্ন জাতের ফল ফলাদির গাছ ও বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি দেখা যায়। সামান্য পতিত জমিতে অনেক ধরনের ফলমূল শাক সবজির চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির ঘাটতি পূরণে পুষ্টি বাগান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনীতে উপজেলায় প্রথম ধাপে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে প্রথম ধাপে ১শ ৮২ জন, দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ১শ ৫ জনসহ মোট ২ শ ৮৭ জন কৃষককে ১.৫ (দেড়) শতক করে প্রায় ৪ একর ৩০ শতক পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শণী তৈরি করে দেয়া হয়েছে। উক্ত কৃষকদের মাঝে বীজ ও ইউরিয়া ৫ কেজি, ডিএপি ৫ কেজি, এমওপি ৫ কেজি, জৈব সার ১০ কেজি, এছাড়া পেঁপে, পেয়ারা, জাম্বুরা ও লেবুর চারাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক এর বীজ প্রণোদনা হিসাবে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পারিবারিক পুষ্টি বাগানের পরিচর্যা করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন পুষ্টি বাগান চাষিরা। তারা বলেন, অল্প জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফলমূল শাক সবজি চাষ করা সম্ভব তা আগে জানা ছিল না। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পারিবারিক এ পুষ্টি বাগান করা হয়। এ পুষ্টি বাগানে বীজ, সার, ফলের চারাগাছসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস। পুষ্টি বাগান মাত্র দেড় শতক করে পতিত জমিতে তৈরি করা হয়। অল্প জায়গায় যে সকল সবজি হয়েছে তা দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরুণ করা সম্ভব বলে জানান তারা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের সাতদরগাহ রা¤প্রসাদের পুষ্টি বাগান চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ১.৫০ (দেড়) শতক পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী তৈরি করেছি। এখানে বেডের মাধ্যমে যে সকল সবজি রয়েছে তার মধ্যে বেগুন, ধন্দুল, লালশাক, মরিচ, মূলা, ধনেপাতা, ডাটা, সবুজ শাক, পুই শাক, ঢেড়ষ, লাউ, করলা এছাড়াও বাগানের চারিদিকে রয়েছে পেঁপে, পেয়ারা, লেবু ও জাম্বুরা। এ সকল সবজির ফলন প্রায় সবসময় হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, পতিত জমির এ পুষ্টি বাগান প্রত্যেকের বাড়িতে থাকলে নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা অনেক উপকৃত হত।
উক্ত এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আর,এফ বানু জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বীজ, সার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। পারিবারিক পুষ্টি বাগানের চাষ পদ্ধতি এবং বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া ও সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী তৈরি করা চাষির মধ্যে আব্দুল খালেক, এরশাদ, হোসনেআরা, হাবিবুর, সিদ্দিকুল ইসলাম, আরফিনা, নিলুফা সহ আরও অনেকে বলেন, আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী তৈরি করেছি। যে সকল জমিতে পুষ্টি বাগান হয়েছে সে গুলো সবসময় পতিত অবস্থায় থাকত। এখন সেখান থেকে প্রায় সকল সময় সবজি পাচ্ছি। এতে করে বসত বাড়ির আঙ্গিনা বা নিকটস্থ পতিত জমির ব্যবহার করে শাক-সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে স্বল্প খরচ ও শ্রমে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত অংশ বিক্রি করে বাড়তি আয় সম্ভব হবে। আর বাজারে গিয়ে সবজি ক্রয় করার তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে এলাকার সকল শ্রেণি পেশার লোকদের পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান তৈরির আহবান জানান তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এ পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ২ শ ৮৭ জন চাষিকে ১.৫০ (দেড়) শতক পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার সারা দেশে অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করতে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বো”চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রকল্পটির আওতায় গ্রামের মানুষ বসতবাড়ির আঙিনা, পুকুর ও খালের পাড়, বাড়ির আশপাশ, স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত প্রতি ইঞ্চি অব্যবহৃত ও অনাবাদি জমিতে শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন করবেন। এতে মানুষের পুষ্টিহীনতা দূর হওয়ার পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by